Header Ads Widget

Responsive Advertisement

বন্যা পরবর্তী সংকট নিয়ে চিন্তিত কুলাউড়ার বানবাসী মানুষ


আব্দুল বাছিত খান,মৌলভীবাজার: 

মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির এখনো অবনতি রয়েছে। তবে ধীরে ধীরে পানি কমতে শুরু করেছে। বন্যায় আক্রান্ত হয়ে উপজেলার ভূকশিমইল, কাদিপুর, জয়চন্ডী, বরমচাল, ভাটেরা, রাউৎগাঁও, ব্রাহ্মণবাজার ও কুলাউড়া পৌরসভার হাজার হাজার মানুষ বিপাকে পড়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষেরা। 

এসব পরিবার এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে থাকলেও তাদের পরবর্তী দিনযাপন নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় আছেন। তাছাড়া এখন তারা অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছেন। এসব পরিবারের তেমন সঞ্চয় নেই। অনেকের জমানো সঞ্চয় এখন শেষ হয়ে গেছে। আবার অনেকেই শূন্য হাতে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। অর্থ সংকটে এসব পরিবার এখন ত্রাণের দিকে চেয়ে আছেন। 

আবার অনেক আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণের সংকট রয়েছে। শূন্য হাতের এসব বন্যাকবলিত মানুষের দুর্গতি এখানেই শেষ না। তারা পানি নামার সাথে সাথে ফিরতে হবে নিজের বসতভিটায়। বন্যার পানিতে তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, বেশিরভাগ বাড়ির নিচের অংশ পানির স্রোতের কারণে ভেঙে গেছে। অনেক টিনশেডের ঘরের নিচের মাটি সরে গিয়ে ঘরের অবস্থা শোচনীয় হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় পানির স্রোতের কারণে ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যার এই সময়ে আশ্রয়কেন্দ্রে দুর্যোগ-দুর্দশা হলেও বন্যা পরবর্তী এসব মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের এই অবস্থা কাটিয়ে ওঠা অনেকটা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। বন্যা চলাকালীন সময়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেসব পরিবার অবস্থান করছে তারা মানসিকভাবে বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। 

আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরত মিনা বেগম জানান, এখন অনেকে ত্রাণ দেওয়ায় খেতে পারছি। কিন্তু পানি নামার সাথে সাথে ঘর মেরামত করতে হবে। মেরামতের জন্য হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থ নেই। বন্যা পরবর্তী সময়ে আক্রান্ত এলাকার ঘরবাড়ি মেরামত করতে এসব দরিদ্র পরিবার ব্যাপক অর্থ সংকটে পরবেন বলে মনে করেন ভূকশিমইল ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জসিম আহমদ। তিনি বলেন, আমার এলাকার বেশিরভাগ পরিবার নিতান্তই দরিদ্র। তারা এখন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে। কিন্তু বন্যা পরবর্তী সময়ে তাদের ঘরবাড়ি মেরামত ও ঘুরে দাঁড়ানো সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের হবে।আশ্রয়কেন্দ্রের অনেক মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, যারা দেরিতে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছিল তারা শুধুমাত্র পড়নের কাপড় ও জরুরি কাগজপত্র নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠতে পেরেছিল। 

পানি দ্রুত বাড়ার কারণে সময়ের অভাবে তারা অনেক জিনিসপত্র রক্ষা করতে পারেনি। বাড়ি ফিরে এগুলি পাওয়া যাবে কি-না এখন অনেকেরই সন্দেহ রয়েছে। নতুন করে কেনা এসব পরিবারের জন্য বড় ধরনের অর্থ সংকট তৈরি হবে। অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে হুমকিতে রয়েছে বন্যায় আক্রান্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া। তারা স্বাভাবিকভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে হলে তাদের সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হবে। 

আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরত শিক্ষার্থী অর্পিতা রানী জানান, পানিতে আমাদের ঘর তলিয়ে গেছে। আমার বাবার তেমন আয় নেই। এখন আমার পড়ালেখা কিভাবে চলবে তা বুঝে উঠতে পারছি না। এসব পরিবারের ঘুরে দাঁড়ানোর পর লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে নেওয়াটা তাদের জন্য আরও বেশি দুশ্চিন্তার কারণ এখন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান, আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। বন্যার পরবর্তী সময়েও ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে উপজেলা প্রশাসন থাকবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ