Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ব্যবহৃত অলংকারের জাকাত দিতে হবে কি?


জাকাত ফরজ ইবাদত এবং ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। পবিত্র কোরআনে জাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন- وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ ‘তোমরা নামাজ আদায় করো এবং জাকাত প্রদান করো। (সুরা বাকারা: ১১০)

নিসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে- এমন স্বাধীন ও পূর্ণবয়স্ক মুসলিম নর-নারীর ওপর জাকাত ফরজ। স্বর্ণের নিসাব সাড়ে সাত তোলা (ভরি), রুপার সাড়ে বায়ান্ন তোলা। কারও কাছে কিছু স্বর্ণ ও কিছু রুপা থাকলে এবং এর কোনোটাই আলাদাভাবে নিসাব পরিমাণ না হলে, এ অবস্থায় যদি উভয়টির মূল্য রুপার নিসাব পরিমাণ হয়, তাহলে জাকাত দিতে হবে। ব্যবসায়িক পণ্য ও নগদ টাকার নিসাবও সাড়ে ৫২ তোলা রুপার মূল্যের সমান। হাতে ও ব্যাংকে রক্ষিত নগদ অর্থ ছাড়াও সঞ্চয়পত্র, সিকিউরিটি, শেয়ার সার্টিফিকেট ইত্যাদি নগদ অর্থ বলে গণ্য হবে।

স্বর্ণ বা রুপার অলংকার ব্যবহৃত হোক বা অব্যবহৃত, নিসাব পরিমাণ হলেই জাকাত দিতে হবে। হাদিসে এসেছে, এক মহিলা তার মেয়েকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে আসেন। মেয়েটির হাতে দুটি স্বর্ণের চুড়ি ছিল। রাসুল (স.) বললেন, তুমি এ অলংকারের জাকাত আদায় কর? মহিলা বললেন, না। রাসুল (স.) বললেন- أَيَسُرّكِ أَنْ يُسَوِّرَكِ اللهُ بِهِمَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ سِوَارَيْنِ مِنْ نَارٍ ‘তুমি কি পছন্দ কর যে, এ দুটি চুড়ির বদলে তোমাকে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন আগুনের দুটো চুড়ি পরাবেন? (সুনানে আবু দাউদ: ১৫৬৩)

উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন- রাসুল (স.) আমার কাছে আসলেন, তখন আমার হাতে রুপার দুটো চুড়ি ছিল। রাসুল (স.) বললেন, এটা কী আয়েশা? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমি যেন আপনার সামনে সেজেগুজে থাকতে পারি এজন্য এগুলো বানিয়েছি। তিনি বললেন, তুমি কি এগুলোর জাকাত আদায় কর? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, এগুলোই তোমাকে জাহান্নামে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে। (সুনানে আবু দাউদ: ১৫৬৫)

উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালামা (রা.) বলেন, আমি স্বর্ণের এক প্রকার অলংকার ব্যবহার করতাম। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, এটা কি কানজের অন্তর্ভুক্ত? (কোরআনে যার জন্য শাস্তির কথা এসেছে) তিনি বললেন- مَا بَلَغَ أَنْ تُؤَدّى زَكَاتُهُ، فَزُكِّيَ فَلَيْسَ بِكَنْزٍ ‘জাকাতের নেসাব পরিমাণ হলে যদি তার জাকাত আদায় করা হয় তাহলে তা কানজের অন্তর্ভুক্ত থাকে না।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৫৬৪)

এজাতীয় বর্ণনাকে সামনে রেখে বড় বড় ফকিহ সাহাবি ও তাবেয়িগণ স্বর্ণ বা রুপার অলংকার ব্যবহৃত হলেও তার জাকাত দেওয়ার ফাতোয়া দিয়েছেন। মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাতে বর্ণিত আছে, ওমর (রা.) আবু মুসা আশআরি (রা.)-এর নামে এ মর্মে চিঠি লেখেন যে- مُرْ مَنْ قِبَلَك مِنْ نِسَاءِ الْمُسْلِمِينَ أَنْ يُصَدِّقْنَ حُلِيّهنّ ‘আপনি আপনার আশপাশের মুসলিম মহিলাদেরকে তাদের অলংকারের জাকাত আদায় করার আদেশ দিন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ১০২৫৭)

আরেক হাদিসে এসেছে, এক মহিলা আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-কে নিজ অলংকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে বললেন, এগুলোর কি জাকাত দিতে হবে? তিনি বলেন- إِذَا بَلَغَ مِائَتَيْ دِرْهَمٍ فَزَكِّيهِ ‘যদি দুইশত দিরহাম (অর্থাৎ জাকাতের নেসাব) পরিমাণ হয় তাহলে এর জাকাত আদায় কর। (মুসান্নাফে আবদুর রাজজাক: ৭০৫৫, আলমুজামুল কাবির, তবারানি: ৯৫৯৪; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৪৩৫৮)

এছাড়াও আয়েশা (রা.), আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.), আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) প্রমুখ সাহাবি এবং ইবনে সিরিন, ইবনুল মুসায়্যিব, সাঈদ ইবনে জুবাইর, আতা, মুজাহিদ, জুহরি, আলকামা, আসওয়াদ ও ওমর ইবনে আবদুল আজিজ প্রমুখ তাবেয়ি অনুরূপ ফতোয়া দিতেন। (মুসান্নাফে আবদুর রাজজাক: ৭০৫৪, ৭০৫৯, ৭০৬০, ৭০৬৫, ৭০৫৭)

একারণেই প্রখ্যাত তাবেয়ি আতা, জুহরি ও মাকহুল বলেন- ‘স্বর্ণ ও রুপার অলংকারে জাকাত দিতে হয়। এটি পূর্ব থেকে চলে আসা সুন্নত। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ১০২৬৭)

উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, স্বর্ণ বা রূপার অলংকার ব্যবহৃত হলেও তার জাকাত দিতে হবে।
(শরহু মুখতাসারিত তাহাবি: ২/৩১৩; বাদায়েউস সানায়ে: ২/১০১; ফাতহুল কাদির: ২/১৬২; আলবাহরুর রায়েক: ২/২২৬)

 

এনএএন টিভি

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ