Header Ads Widget

Responsive Advertisement

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম


নামাজ শ্রেষ্ঠ ইবাদত। ফরজ নামাজের পর তাহাজ্জুদ নামাজ আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়। হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ফরজ নামাজের পর সব নফল নামাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো তাহাজ্জুদ নামাজ তথা রাতের নামাজ।’ (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ)

তাহাজ্জুদ আরবি শব্দ। নিদ্রা যাওয়া ও জাগ্রত হওয়া এ পরস্পরবিরোধী দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়। পবিত্র কোরআনের সুরা বনি ইসরাইলে ৭৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘রাতের কিছু অংশ কোরআন পাঠসহ জাগ্রত থাকুন।’

আল্লাহ তাআলা প্রিয়নবী সা.কে বিশেষভাবে রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে চাদর আবৃত, রাতের নামাজে দাঁড়াও, কিছু অংশ ছাড়া।’ (সুরা: মুজাম্মিল ১-২) ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় রাত্রিকালীন নামাজকে তাহাজ্জুদ নামাজ বলা হয়।

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল

বিজ্ঞ আলেমদের মতে, তাহাজ্জুদ নামাজ একটি নফল নামাজ। এর হলো এটি সুন্নতে গায়রে মুআক্কাদা বা নফল। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ নামাজ চার, ছয়, আট, দশ রাকাত, বারো রাকাত প্রমাণিত। এর থেকে বেশি বা কম পড়াতেও কোন সমস্যা নেই। যেহেতু নফল, তাই যত ইচ্ছা পড়া যায়। দুই রাকাত দুই রাকাত করে যত রাকাত সম্ভব পড়তে পারেন। তবে রাসুল সা. দীর্ঘ সুরা তিলাওয়াত করতেন তাহাজ্জুদ নামাজে।


তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম

সাধারণত সাহরির সময়ই হলো তাহাজ্জুদের সময়। এ সময়ে শেষ হওয়ার আগেই তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে হয়। ঘুম থেকে উঠে ভালোভাবে অজু করে প্রথমে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে জায়নামাজে বসে জিকির করবে। এরপর দুই দুই রাকাত করে যত রাকাত সম্ভব আদায় করতে পারবেন।

রসুল সা. দুই দুই রাকাআত করে এ নামাজ আদায় করতেন। যে কোনো সুরা দিয়েই এ নামাজ পড়া যায়। তবে তিনি লম্বা কেরাতে নামাজ আদায় করতেন। তাই লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ আদায় করা উত্তম।

তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত

তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট নেই। দুই দুই রাকাত করে চার রাকাত পড়তে পারবে। আবার দুই দুই রাকাত করে যত রাকাত ইচ্ছা আদায় করা যায়। ন্যূনতম চার রাকাত আদায় করা উত্তম। যে কয় রাকাতই পড়া হোক, তা নিয়মিত আদায়ের অভ্যাস করা।

হযরত আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আয়েশা রা. কে জিজ্ঞাসা করেন, রমজানে নবীজির নামাজ কেমন হতো? তিনি উত্তরে বলেন, হযরত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানে এবং রমজানের বাইরে এগারো রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না! এরপর আরও চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তো বলাইবাহুল্য! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন। (বোখারি ১/১৫৪)

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

দুই রাকাত দুই রাকাত করে আদায় করতে হয় তাহাজ্জুদ নামাজ। রসুল সা. দুই দুই রাকাআত করে এ নামাজ আদায় করতেন। যে কোনো সুরা দিয়েই এ নামাজ পড়া যায়। তবে তিনি লম্বা কেরাতে নামাজ আদায় করতেন। তাই লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ আদায় করা উত্তম।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে নফল নামাজের নিয়ত করতে হবে। যেহেতু এটা নফল নামাজ। আমি দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করছি আল্লাহু আকবার। এভাবে নিয়ত করলে হয়ে যাবে। যারা আরবিতে পারবে আরবিতে নিয়ত করবেন। نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ رَكَعَتِى التَّهَجُّدِ - اَللهُ اَكْبَر উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া রাকআতাইত তাহাজ্জুদি আল্লাহু আকবার। অর্থ: দুই রাকাআত তাহাজ্জুদের নিয়ত করছি, ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বেঁধে নামাজ পড়বে। আরবি নিয়ত না পারলে কোনো সমস্যা নেই। বাংলায় নিয়ত করলেই হয়ে যাবে।


মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে পুরুষ নারীর নামাজে তেমন পার্থক্য নেই। দুই রাকাত ‍দুই রাকাত করে মোট আট রাকাত নামাজ আদায় করতে পারলে ভালো। সময় না থাকলে শুধু দুই রাকাতই আদায় করতে পারবেন। তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে হলে তাকে কমপক্ষে দুই রাকাত নামাজ থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বে ‌বার রাকাত নামাজ আদায় করতে পারবেন।

প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সা. তাহাজ্জুদের নামাজ কমপক্ষে আট রাকাত আদায় করতেন। তবে আট রাকাত নামাজ আদায় করাই ভালো তবে এটা আবশ্যিক নয় আপনি যতটুকু আদায় করতে পারবেন।

৪০ দিন তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত

তাহাজ্জুদ নামাজ টানা ৪০ দিন আদায় করেন বিশাল সওয়াব রয়েছে। আল্লাহর কাছে যা চাওয়া হবে অবশ্যই আল্লাহ তাআলা দিবেন। পৃথিবীর যে কোনো সমস্যা আল্লাহর কাছে চাইলে আল্লাহ ফিরিয়ে দিবেন না।

হযরত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কেউ যদি তার কোনো ইচ্ছা আল্লাহর কাছে পেশ করতে চায়, মহান আল্লাহর থেকে কিছু পেতে চায়, সে যেন টানা ৪০ দিন তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে তার ইচ্ছা চেয়ে নেয়। অবশ্যই অবশ্যই তার যেকোনো হালাল ইচ্ছা আল্লাহ তাআলা কবুল করে নেবেন। (বুখারি)

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত

তাহাজ্জুদের নামাজ নবী করিম সা.-এর ওপর ফরজ ছিল। উম্মতের ওপর এটি ফরজ না হলেও সব সুন্নাত নামাজের মধ্যে এটিই উত্তম। তাহাজ্জুদ অর্থ ঘুম থেকে জাগা আর তাহাজ্জুদের সময় হলো ইশার নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে তারপর অর্ধেক রাতের পর নামাজ আদায় করা। সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত থাকে। গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে নামাজ আদায়ে সওয়াব বেশি।

পবিত্র মক্কা ও মদিনায় হারামাইন শরিফাইনে তাহাজ্জুদের সালাতের জন্য আজান দেয়া হয় এবং অতি গুরুত্বের সাথে আদায় করা হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন,

‘যারা শেষ রাতে ইবাদত ও প্রার্থনা করেন তাদের প্রশংসাস্বরূপ কিয়ামত দিবসে বলবেন, তারা রাতের সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত করে আর রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে।’ (সুরা: আযযারিয়াত ১৭-১৮)।

মহান আল্লাহ প্রতি রাতে নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন, যখন রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে। তিনি তখন বলতে থাকেন, কে আছো যে আমায় ডাকবে? আর আমি তার ডাকে সাড়া দেবে। কে আছো যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দান করব। কে আছো যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আর আমি তাকে ক্ষমা করব। (বুখারি)

কে আছো যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আর আমি তাকে তা দান করব? কে আছো যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করব? (বুখারি ও মুসলিম)

 

এনএএন টিভি

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ